ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শিক্ষক রথীন্দ্র কুমার দাস স্মরণে শোকসভা টিলা কেটে সরকারি জায়গায় ইউপি চেয়ারম্যানের বহুতল মার্কেট ছয় থানার ওসি বদলি কমিশনকে নজরে রাখবে রাজনৈতিক দলগুলো সালমান-আনিসুল হক ফের রিমান্ডে দেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা দেবে জার্মানি হাওরকে বাঁচতে দিন আগস্টে সড়কে ঝরেছে ৪৭৬ প্রাণ কৃষি গুচ্ছের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ২৫ অক্টোবর “অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে, তবে তা সীমাহীন নয়” ইজারাকৃত সব জলমহালের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে বিক্ষোভ পদ হারিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরছেন আ.লীগ নেতারা সাবেক ৩ সিইসি’র বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নিহতদের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা হাওর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে: মহাপরিচালক হাওর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে: মহাপরিচালক অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ইউনেস্কো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি প্রধান বিচারপতির ১২ নির্দেশনা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর বিবেচনার অনুরোধ

লক্ষ থাকুক স্থিতিশীল গণতন্ত্র: রমেন্দ্র কুমার দে

  • আপলোড সময় : ০১-০৯-২০২৪ ০৯:০১:৪১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৯-২০২৪ ০৯:৫৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
লক্ষ থাকুক স্থিতিশীল গণতন্ত্র: রমেন্দ্র কুমার দে
লক্ষ থাকুক স্থিতিশীল গণতন্ত্র রমেন্দ্র কুমার দে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বিপুল প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা পরবর্তী এদেশের জন্য স্মরণীয় অধ্যায়। এর মাধ্যমে বৈষম্যেহীন সমাজ গঠনের সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অতীতের রাজনীতিবিদদের ভূমিকা : ঔপনিবেশিক শাসক ও তাদের দালাল সামন্ত প্রভু, লুণ্ঠনকারী অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্তির জন্য এ উপমহাদেশের মানুষরা নিজেদের সংগঠিত করেছেন, আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন নিঃস্বার্থভাবে। নিজেদের ভোগ বিলাসিতা ত্যাগ করেছেন দেশের জন্য। এ উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশদের তাড়িয়েছেন। তাদের এ ত্যাগের ফলেই সম্ভব হয়েছে সামন্ত প্রভুদের লুণ্ঠন থেকে কৃষকদের মুক্তি। পাকিস্তানি শোষকদের কাছ থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে যারা রাজনীতির মাঠে ছিলেন তারাতো লুটেরা ছিলেন না। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট : ১৯৭১ সালে পাকিস্তান রক্ষার জন্য বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যে মুক্তিযুদ্ধ হল, তাতে আমরা দেখেছি সশস্ত্র মৌলবাদীদের উন্মত্ততার সর্বোচ্চ রূপ। গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করেছে তারা। পাকিস্তানি সেনা শাসকেরা তাদের সৈন্যবাহিনীকে ধর্মযুদ্ধের চেতনায় ইসলাম রক্ষার নামে ধর্মউন্মাদ করে তুলেছিল, তেমনি দখলদার পাকবাহিনীর সহযোগী বিশেষ করে আলবদর, আলশামস ও রাজাকার প্রভৃতি বাহিনীতে সংগঠিত ও সশস্ত্র যুদ্ধের তালিম দিয়ে লেলিয়ে দিয়েছিল মুক্তিবাহিনী ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তাদের কাছে এটা ছিল ‘জিহাদ’। তাদের এই ভূমিকার জন্য আজও তারা অনুতাপ করেনি। বলিনি তারা ভুল করেছে। এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যুবক-কৃষক শ্রমজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। তাদের সবারই লক্ষ্য ছিল হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা। তারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। মানুষের স্বপ্ন ছিল পাকিস্তানি শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি। যেসব রাজনীতিবিদ এই আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের কারো তো লুণ্ঠনের ইতিহাস ছিল না। কারণ তখন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছিল। দলে কর্মীদের মতামত প্রাধান্য পেত। যৌথ নেতৃত্ব ছিল, জবাবদিহি ছিল। স্বাধীনতা উত্তর ৫৩ বছর : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পার্টিগুলোতে গণতন্ত্রের চর্চা বা যৌথ নেতৃত্ব ছিল না। পার্টিগুলো চলে আসছে একক নেতৃত্বের উপর ভিত্তি করে। পার্টিতে মাঠপর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্বের ফলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে বসেছে। কাজেই নেতা-কর্মীদের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা ও রাজনীতিতে স্বচ্ছতাকে বাদ দিয়ে স্বার্থসিদ্ধিতে সবাই মেতে উঠেছিল। দেশে ৫৩টি বছর একক নেতৃত্বে প্রচলন হওয়ার কারণে কর্তৃতবাদীতার সৃষ্টি হয়েছে এবং ‘জোর যার মুলুক তার’ নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলে দেশে লুটপাট দুর্নীতি চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। এর ফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক লোক, দুর্নীতিবাজদের অর্থপাচারের কারণে, দিন দিন মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মানুষ কর্মহীন হয়ে আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সৃষ্টি হয়েছে ধনী গরিবের বৈষম্য। ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতাকে জিইয়ে রেখে গদি ঠিক রাখা হয়েছে। এতে ধর্মীয় গোড়ামিতে বিশ্বাসী বা বিভিন্ন স্বার্থান্বেষীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বিভিন্ন সময় আঘাত হেনেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরানো হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পুনর্গঠনের কাজে হাত দিয়েছে। সত্যিকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন, অন্তর্বর্তীকালীন এ প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজে নেমেছে। এসব সংস্কার চাইলেই হুট করে করা যাবে না। এর জন্য সময় প্রয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ সরকারের উপর চাপ আছে শীঘ্র নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের। চাপ আছে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি-দাবা আদায়ের জন্য। এখনো অনেক ক্ষেত্রেই পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়নি, আমলাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি, সংখ্যালঘুদের ভয় আতঙ্ক কাটেনি। দমনমূলক আইন বাতিল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, আইন বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, অর্থ বিভাগ চিকিৎসা বিভাগসহ সর্বক্ষেত্রেই সংস্কার প্রয়োজন। দলগুলোর পরিবর্তন প্রয়োজন : রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের দুর্নীতি মুক্ত ও জন সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। রাজনৈতিক কাজে তার অবদান থাকতে হবে। দখলবাজি, চাঁদাবাজি বাদ দিতে হবে। পার্টির মধ্যে মাঠপর্যায় থেকে কর্মীদেরও মূল্যায়নের প্রথা চালু করা প্রয়োজন। সমাজে বৈষম্য দূর করতে হলে ও পূর্ণ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে নিজে গণতন্ত্রী হতে হবে। দলগুলির মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালু করে দলের ভিত্তি মজবুত করার সময় এখনই। কারণ পার্টিতে ক্ষমতার লড়াই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনোখুনিও হয়েছে। পার্টির কর্মীদের মধ্যে একে অন্যকে সহ্য করা, সহনশীলতার অভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বে। রাজনীতিবিদরা শেষে দুঃখ দুর্দশায় জনগণের পাশে থাকবে, এটাই কাম্য হওয়া উচিত। অতীতের সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তাই বর্তমান সরকারের সংস্কারের পদক্ষেপগুলোর পক্ষে সহযোগিতা করা জরুরি। সত্যিকার গণতন্ত্র ফিরে আসুক, এর জন্য অপেক্ষা করা প্রয়োজন। দেশের জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসুক! যেন আর রক্ত ঝরাতে না হয়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য